গরমকালে শরীরচর্চার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়ে তা বিস্তারিত জেনে নিন।

গরমকালে শরীরচর্চার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়ে তা বিস্তারিত জেনে নিন।

আপনারা যারা "গরমকালে শরীরচর্চার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখার বিষয়" সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন গরমকালে শরীরচর্চা করলে শরীরে নানা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চললে আপনি নিরাপদে ও কার্যকরভাবে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারবেন। বিস্তারিত পড়ুন এই আর্টিকেলে।

চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, গরমকালে শরীরচর্চার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়ে সেই সম্পর্কে।

গরমকালে শরীরচর্চার জন্য দ্রুত টিপস


ভূমিকাঃ গরমকালে শরীরচর্চার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়।

গরমকাল শরীরচর্চার জন্য একদিকে যেমন উপযুক্ত সময়, অন্যদিকে তেমনি কিছু বিশেষ সতর্কতারও দাবি রাখে। অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার কারণে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এই সময় ব্যায়াম করার জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা ও সতর্কতা। আসুন জেনে নিই, গরমকালে শরীরচর্চার সময় কোন কোন বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

আরো পড়ুনঃ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক ১০টি সবুজ খাবার সম্পর্কে জেনে নিন।

১। পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ

গরমের সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ব্যায়ামের আগে, চলাকালীন এবং পরে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি।

টিপসঃ

  • ব্যায়ামের অন্তত ৩০ মিনিট আগে ১-২ গ্লাস পানি পান করুন।
  • শরীরচর্চার মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে পানি পান করুন।
  • খুব ভারী ব্যায়ামের সময় ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়ও উপকারী হতে পারে।

২। সঠিক পোশাক নির্বাচন করুনঃ

গরমকালে শরীরচর্চার জন্য হালকা, ঢিলেঢালা ও ঘাম শোষণক্ষম (sweat-wicking) কাপড় পরা উচিত। তুলো (cotton) বা স্পোর্টস-গ্রেড সিন্থেটিক কাপড় আদর্শ। এতে শরীর শ্বাস নিতে পারে এবং অতিরিক্ত তাপ জমে থাকে না।

এড়িয়ে চলুনঃ

  • ভারী, ঘাম আটকানো কাপড়।
  • কালো রঙের কাপড়, যা তাপ শোষণ করে।

৩। সঠিক সময়ে ব্যায়াম করুনঃ

গরমকালে দিনে সবচেয়ে গরম সময় হলো দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা। এই সময় ব্যায়াম করা বিপজ্জনক হতে পারে। সূর্যের তাপ ও ইউভি রশ্মির তীব্রতা শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপযুক্ত সময়ঃ

  • ভোর বা সকালে সূর্য ওঠার আগে
  • সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার পর

৪। হালকা ও পর্যাপ্ত খাবার খানঃ

ব্যায়ামের আগে ভারী খাবার খাওয়া উচিত নয়। আবার খালি পেটে কঠিন ব্যায়াম করাও ক্ষতিকর। তাই এমন কিছু খাবার খান যা সহজে হজম হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়, যেমন কলা, ওটস বা হালকা প্রোটিন স্ন্যাকস।

খেয়াল রাখুনঃ

  • ব্যায়ামের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে হালকা খাবার খান।
  • খুব বেশি ফ্যাট বা মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৫। শরীরের সংকেতকে গুরুত্ব দিনঃ

ব্যায়ামের সময় শরীর যদি ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা অস্বাভাবিক ঘাম দেওয়ার সংকেত দেয়, তাহলে সাথে সাথে বিশ্রাম নিন। প্রয়োজনে ব্যায়াম বন্ধ করে ঠান্ডা জায়গায় যান এবং পানি পান করুন।

সতর্ক হোনঃ

  • হিট স্ট্রোকের লক্ষণ (মাথা ব্যথা, তীব্র দুর্বলতা, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া) দেখলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।

আরো পড়ুনঃ ডাবের পানির উপকারিতা ! সকালে খালি পেটে খেলে যেসব দারুণ পরিবর্তন আসবে তা বিস্তারিত জেনে নিন।

৬। ওয়ার্ম-আপ ও কুল-ডাউন মেনে চলুনঃ

গরম হলেও সরাসরি কঠিন ব্যায়াম শুরু করা ঠিক নয়। ব্যায়ামের আগে ওয়ার্ম-আপ এবং পরে কুল-ডাউন করাটা অত্যন্ত জরুরি। এতে পেশী উষ্ণ হয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ইনজুরি বা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

৭। ছায়াযুক্ত বা ইনডোর স্থান বেছে নিনঃ

যদি সম্ভব হয়, শরীরচর্চার জন্য ছায়াযুক্ত পার্ক বা ইনডোর জিম বেছে নিন। এতে সরাসরি সূর্যের তাপ এড়ানো যায়। অনেকেই সকালে ছায়াময় পার্কে জগিং বা হালকা এক্সারসাইজ করেন, যা অত্যন্ত কার্যকর।

৮। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুনঃ

বাইরে ব্যায়াম করলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করা জরুরি। তাই ব্যায়ামের আগে অবশ্যই এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এতে ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।

৯। শরীরের লবণমাত্রা ঠিক রাখুনঃ

গরমে প্রচুর ঘাম ঝরার ফলে শরীর থেকে শুধু পানি নয়, লবণ ও অন্যান্য খনিজ পদার্থও বেরিয়ে যায়। ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় বা ঘরে তৈরি লেবু পানি পান করে এই ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

১০। অনুপযোগী দিনে বিশ্রাম নিনঃ

যদি আবহাওয়া খুব বেশি গরম ও আর্দ্র হয়, তবে ওইদিন ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। বদলে হালকা স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।


অতিরিক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ

  • হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় ও পরিশ্রম বাড়ান।
  • ব্যায়ামের পর দ্রুত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন, যাতে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়।
  • ব্যায়ামের সময় ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত নিজের ওজন ও রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন।

আরো পড়ুনঃ জিমে না গিয়েও ভুঁড়ি কমানোর ১০টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

উপসংহারঃ 

প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন গরমকালে শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, তবে তার জন্য চাই কিছু বাড়তি সতর্কতা। পর্যাপ্ত পানি পান, সঠিক পোশাক নির্বাচন, শরীরের সংকেত বোঝা এবং সময়মতো বিশ্রাম নেওয়া—এই কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলেই আপনি নিরাপদ ও কার্যকরভাবে ফিটনেস রুটিন বজায় রাখতে পারবেন। তাই সঠিক নিয়ম মেনে চলুন এবং এই গরমকালেও সুস্থ থাকুন, ফিট থাকুন!

যাই হোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

Post a Comment

0 Comments