কোন বয়সী শিশুকে কেমন শাসন করবেন ! পর্যায়ভিত্তিক সঠিক পদ্ধতি জেনে নিন।
আপনারা যারা "কোন বয়সী শিশুকে কেমন শাসন করবেন" এই বিষয়ে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন শিশুর বয়স অনুযায়ী শাসনের সঠিক পদ্ধতি কী? আবিষ্কার করুন ১-১৮ বছর বয়সী সন্তানদের যথাযথ শাসনের কৌশল, ভালো অভ্যাস গঠনের টিপস এবং সম্পর্ক উন্নতির কার্যকরী উপায় সম্পর্কে।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, কোন বয়সী শিশুকে কেমন শাসন করবেন ! পর্যায়ভিত্তিক সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ কোন বয়সী শিশুকে কেমন শাসন করবেন: পর্যায়ভিত্তিক সঠিক পদ্ধতি।
শিশুর শাসন বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ, ভুল পদ্ধতিতে শাসন করলে শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আবার যথার্থ শাসন শিশুকে সুশৃঙ্খল, দায়িত্বশীল ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। তবে বয়সভেদে শাসনের কৌশল ভিন্ন হওয়া উচিত। চলুন দেখে নিই কোন বয়সে শিশুকে কীভাবে শাসন করা উচিতঃ
আরো পড়ুনঃ চার বছরের নীচে শিশুদের জন্য কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ কেন তা বিস্তারিত জেনে নিন।
১-৩ বছর বয়সের শিশুদের শাসনঃ
এই বয়সের বৈশিষ্ট্য:
- আবিষ্কারপরায়ণতা বৃদ্ধি পায়।
- নিয়ম বোঝার শুরু হয়।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা দেখা যায়।
শাসনের পদ্ধতি:
- সরাসরি নিষেধ না করে বিকল্প পথ দেখান। যেমন: "ওটা ছুঁইবে না, এসো আমরা এটা দেখি।"
- শিশুর ভুল আচরণে ধৈর্য ধরুন, বারবার সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলুন।
- শারীরিক শাস্তি থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
- ভালো আচরণের জন্য প্রশংসা করুন ("তুমি খুব সুন্দর করে খেলো!")
৪-৬ বছর বয়সের শিশুদের শাসনঃ
এই বয়সের বৈশিষ্ট্য:
- নিজস্ব ইচ্ছা প্রকাশে আগ্রহী হয়।
- নিয়ম-কানুনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শুরু করে।
- অনুকরণ প্রবণতা বেশি থাকে।
শাসনের পদ্ধতি:
- নিয়ম ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দিন (যেমন: খাবার আগে হাত ধোয়া)।
- অনুপযুক্ত আচরণ করলে তার ফল কী হবে তা ব্যাখ্যা করুন।
- সময়সীমা নির্ধারণ করে দিন ("৫ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করো")।
- ইতিবাচক রোল মডেল হোন — শিশুরা যা দেখে তাই শেখে।
৭-৯ বছর বয়সের শিশুদের শাসনঃ
এই বয়সের বৈশিষ্ট্য:
- ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা তৈরি হয়।
- আত্মমর্যাদা গড়ে ওঠে।
- বন্ধুদের প্রভাব বাড়ে।
শাসনের পদ্ধতি:
- সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করুন।
- যুক্তিপূর্ণ শাসন করুন; আদেশমূলক ভাষার পরিবর্তে বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধান করুন।
- দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দিন (যেমন: নিজের বই গুছানো)।
- ভুলের জন্য অনুশোচনা করা শেখান, তবে অপমান নয়।
আরো পড়ুনঃ শিশুদের ৬টি বাস্তব অভ্যাস যা তাদের কঠিন কাজ উপভোগ করতে সাহায্য করে।
১০-১২ বছর বয়সের শিশুদের শাসনঃ
এই বয়সের বৈশিষ্ট্য:
- স্বাধীনচেতা মনোভাব তৈরি হয়।
- আত্মপরিচয়ের খোঁজে থাকে।
- সমবয়সীদের সঙ্গে তুলনা শুরু করে।
শাসনের পদ্ধতি:
- স্বাধীনতা দিন, তবে পরিষ্কার সীমারেখা নির্ধারণ করুন।
- পারিবারিক সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের সুযোগ দিন।
- আচরণগত নিয়ম লিখিত আকারে বানিয়ে রাখুন।
- ভুলের ফলাফলের জন্য বাস্তব শিক্ষা দিন, তবে ভালোবাসার বন্ধন অটুট রাখুন।
১৩-১৮ বছর বয়সের কিশোর-কিশোরীদের শাসনঃ
এই বয়সের বৈশিষ্ট্য:
- ব্যক্তিগত মতামত জোরালো হয়ে ওঠে।
- অনুভূতিশীলতা তীব্র হয়।
- স্বাধীনতার প্রবল চাহিদা জন্ম নেয়।
শাসনের পদ্ধতি:
- আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজুন; আদেশ-নির্দেশ কম দিন।
- সম্মান দেখান, যেন তারাও আপনাকে সম্মান করতে শিখে।
- তাদের সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করুন।
- ভালো আচরণের জন্য আন্তরিকভাবে প্রশংসা করুন।
শিশুকে শাসনের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালাঃ
- শ্রদ্ধা বজায় রাখুন: কখনোই অপমান বা অপদস্থ করবেন না।
- নিয়মিত ভালোবাসা প্রকাশ করুন: শিশুকে জানিয়ে দিন, শাসনের মধ্যেও ভালোবাসা আছে।
- কনসিসটেন্ট (সামঞ্জস্যপূর্ণ) থাকুন: একই ভুলের জন্য একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিন।
- শুনুন: শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
- নিজের আচরণের প্রতিফলন দেখুন: শিশু আপনার কাছ থেকেই শেখে।
আরো পড়ুনঃ সন্তান মারকুটে হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন কীভাবে বদলাবেন খুদের বদভ্যাস গুলো।
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, শিশুকে শাসন মানে তাকে দমন করা নয়, বরং শিখিয়ে দেয়া — কীভাবে নিজেকে পরিচালনা করবে। বয়সভেদে প্রয়োজনীয় কৌশল প্রয়োগ করে শিশুকে সুশৃঙ্খল, আত্মনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। মনে রাখুন, ভালোবাসা আর শৃঙ্খলা হাত ধরাধরি করেই সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে।
যাইহোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
0 Comments