কোরবানি কার উপর ওয়াজিব ! ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা সম্পর্কে জেনে নিন।
আপনারা যারা "কোরবানি যাদের ওপর ওয়াজিব" এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে, আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য। কেননা আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন কোরবানি কার উপর ওয়াজিব, ইসলামিক শর্ত ও বিধান মতে। কোরবানি ফরজ বা ওয়াজিব, প্রয়োজনীয় শর্তাবলি ও আরও অনেক কিছু।
চলুন এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নিই, কোরবানি কার উপর ওয়াজিব ! ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ কোরবানি কার উপর ওয়াজিব ! ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
কোরবানি ঈদুল আজহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ইসলামে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই ইবাদতের মাধ্যমে মুসলমানরা ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর ত্যাগের স্মরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই জানেন না, কোরবানি আসলে কার উপর ওয়াজিব বা ফরজ। এই আর্টিকেলে আমরা কোরবানি সম্পর্কিত ইসলামী বিধান, শর্ত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আরো পড়ুনঃ হালাল-হারাম বুঝে ইবাদত করতে হবে – একজন মু’মিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা সম্পর্কে জেনে নিন।
কোরবানির সংজ্ঞাঃ
কোরবানি শব্দটি আরবি “قربان” (কুরবান) থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে 'আসন্ন হওয়া' বা ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা’। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে, নির্দিষ্ট সময় ও নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলা হয়।
কোরবানি কাদের উপর ওয়াজিব?
১। প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) মুসলিমঃ
কোরবানি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের ওপর ওয়াজিব। শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
২। আকলি (স্মরণশক্তিসম্পন্ন/সুস্থ মানসিক অবস্থা)
যাদের মানসিক ভারসাম্য আছে এবং সুস্থভাবে চিন্তা করতে পারে, কেবল তাদের উপরই কোরবানি ওয়াজিব হয়।
৩। মুকীম (স্থানীয়/মুসাফির নয়)
যারা নিজের এলাকায় অবস্থান করছে এবং মুসাফির নয় (অর্থাৎ ৭৭ কিমি বা তার বেশি দূরের সফরে যায়নি), তাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব।
৪। নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকঃ
নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝায় — যার মালিক এমন পরিমাণ সম্পদের মালিক যা নিসাবের সীমা অতিক্রম করে (স্বর্ণ বা রূপার পরিমাণ অনুযায়ী)। বর্তমানে অনেক ফিকহী মতে ৭.৫ তোলা সোনা বা ৫২.৫ তোলা রূপা বা সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব হয়।
নিসাবের হিসাব কীভাবে করবেন?
ধরা যাক, আপনি রূপার নিসাব অনুসরণ করছেন। যদি রূপার বর্তমান বাজার মূল্য ৯০ টাকা প্রতি গ্রাম হয়, তাহলে:
অর্থাৎ, যার কাছে প্রয়োজনাতিরিক্ত ৫৫,০০০ টাকার সম্পদ (নগদ টাকা, স্বর্ণ, রূপা, ব্যবসায়িক পণ্য ইত্যাদি) আছে এবং সে ঋণমুক্ত, তার উপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
নারীর উপর কোরবানি ওয়াজিব কি?
হ্যাঁ, যদি কোনো নারী উপরোক্ত শর্তাবলি পূরণ করেন (নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন), তাহলে তাঁর উপরও কোরবানি ওয়াজিব হবে। স্বামী বা বাবার দায়িত্ব নয়, বরং যে নিজে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাঁর নিজের দায়িত্ব।
এক পরিবারের একটাই কোরবানি?
অনেকে মনে করেন এক পরিবারের একজন কোরবানি করলেই যথেষ্ট। কিন্তু ইসলামী বিধান অনুযায়ী, পরিবারের যতজন সদস্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, প্রত্যেকের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। একেকজনের জন্য আলাদা কোরবানির পশু বা অংশ থাকতে হবে।
মুসাফিরের জন্য কোরবানি?
মুসাফিরের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে ইচ্ছা করলে তিনি কোরবানি করতে পারেন, এটি নফল হিসেবে গণ্য হবে এবং সওয়াব পাওয়া যাবে।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কি কোরবানি করবেন?
যদি কারো ঋণ থাকলেও তিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন (ঋণ বাদ দিয়েও নিসাব থাকে), তাহলে তার উপর কোরবানি ওয়াজিব। অন্যথায় নয়।
কোরবানি না করলে কী হয়?
কোরবানি বিষয়ক ভুল ধারণাঃ
- শুধু ধনীদের কাজ – কোরবানি শুধুমাত্র নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা ব্যক্তিদের জন্য ওয়াজিব।
- নারীদের কোরবানি করতে হয় না – এটি ভুল। নারীর নিজের সম্পদ থাকলে তাঁর জন্যও ওয়াজিব।
- একটি গরু এক পরিবারে যথেষ্ট – যদি পরিবারের একাধিক সদস্যের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়, তবে সবার জন্য আলাদা অংপ্যশ থাকা আবশ্যক। সফর ১
উপসংহারঃ
প্রিয় পাঠকগণ, আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন, কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর ওয়াজিব। কাদের উপর এই ইবাদত ফরজ, তা স্পষ্টভাবে জানা জরুরি, যাতে কেউ অজ্ঞতাবশত গুনাহগার না হয়ে পড়ে। ইসলামের প্রতিটি নির্দেশনার মধ্যে কল্যাণ নিহিত। তাই আমাদের উচিত এই ইবাদত যথাযথভাবে পালন করা।
যাই হোক যদি কোন মন্তব্য থেকে থাকে তবে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ
0 Comments